সবাইকে স্বাগতম projukti.com.bd তে। আজ আমরা আলোচনা করবো গেমিং পিসি বিল্ড এর কিছু প্রয়োজনীয় টিপস নিয়ে। গেমিং পিসি বিল্ড এর আগে অনেকের ঘুম হারাম হয়ে যায় চিন্তা করতে করতে যে কি ধরনের গেমিং পিসি বানাবেন কারন বাজেট ঘাটতি প্রায় সকলেরই মূল একটি সমস্যা। বাজেট ঘাটতি আর কম্পোনেন্ট সিলেকশন এর মারামারি থেকে রেহায় পেতে অনেকেই দৌড়াদৌড়ি করেন বিভিন্ন গেমিং এক্সপার্ট ও গেমিং রিলেটেড ফেসবুক গ্রুপে, এই ব্যাপারে কিছুটা সহযোগিতা পেতে, অনেকে আবার চক্কর খেতে থাকেন বিভিন্ন কম্পিউটারের মার্কেটগুলোতে। সেই সকল নতুন ও বাজেট গেমারদের কথা মাথায় রেখে আজকে এই ব্লগটি লেখা। তাই ঘুম হারাম না করে পরে নিন সম্পূর্ণ ব্লগটি।
প্রায় ১৫ বছর আগেও গেমিং পিসি বলতে আলাদা কিছু ছিল না। প্রজুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি বর্তমান গেইমগুলোর ডেভেলপমেন্টের ধারায় ভালো মানের গ্রাফিক্স, প্রসেসর, মাদারবোর্ড, র্যাম সহ একটি অত্যাধুনিক পিসি বিল্ড করা গেমারদের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। গেমিং পিসি বলতে আমরা শুধু গেমিং করার মত একটি সয়ংসম্পূর্ণ পিসিকে বুঝি যাতে গেমিং এর পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং সহ ফ্রীলান্সিং এর কাজগুলোও করা যাবে। তো চলুন দেখে নেই গেমিং পিসি বিল্ড করার কিছু প্রয়োজনীয় টিপস এন্ড ট্রিক্স:
একটি গেমিং পিসির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর পারফর্মেন্স। এই পারফর্মেন্স মূলত মাদারবোর্ড, প্রসেসর, গ্রাফিক্স কার্ড এবং র্যাম এই চারটি কম্পোনেন্ট এর উপর নির্ভর করে। এই চারটি কম্পোনেন্ট আপনার পিসিতে যত উন্নত মানের ব্যাবহার করবেন, আপনার গেমিং পিসি তত ভালো পারফর্মেন্স দিবে। আজকে আমরা এই চারটি কম্পোনেন্ট সহ সহায়ক আরও কম্পোনেন্ট যেমন পাওয়ার সাপ্লাই, স্টোরেজ, কেসিং এর বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করবো।
১) প্রসেসর (Processor)
প্রসেসর একটি পিসির পারফর্মেন্স এর ক্ষেত্রে মূল একটি কম্পোনেন্ট। তাই প্রথমেই সঠিক প্রসেসরটি নির্বাচন করতে হবে। একটি ভালো মানের প্রসেসর ব্যাবহার করলে পিসি আপগ্রেডের ব্যাপারে আপনি আগামী কয়েক বছর নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন । প্রসেসর এর বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে বড় দুটি ব্রান্ড হল INTEL এবং AMD । এই দুটি ব্র্যান্ড মূলত জেনারেশন ভেদে অনেক ধরনের প্রসেসর বাজারে নিয়ে আসছে। তবে অবশ্যই প্রসেসর এর সকেট অনুযায়ী আপনাকে মিলিয়ে মাদারবোর্ড কিনতে হবে।
ভালো মানের এবং নতুন জেনারেশনের প্রসেসর নেয়া ভালো তাই সম্পূর্ণ পিসি বাজেটের একটি বড় অংশ প্রসেসর এ দিতে পারেন। বার বার প্রসেসর পরিবর্তন করা একটি ঝামেলার কাজ কারন প্রসেসর এর সাথে মিলিয়ে আপনাকে মাদারবোর্ড ও পরিবর্তন করতে হতে পারে।
প্রসেসর কেনার সময় অবশ্যই ক্লক স্পীড (HZ), কোর (Core) এবং ক্যাশ মেমোরি(Cache) দেখে কিনতে হবে। ক্লক স্পীডের ক্ষেত্রে বেইজ ক্লক ও বুস্ট ক্লক বেশি থাকে এমন প্রসেসর কিনতে হবে। সাথে সাথে কোর ও ক্যাশ মেমোরি বেশি হলে অবশ্যই ভালো।
এখন আপনার বাজেটের মধ্যে যদি Core i3 এর বর্তমানে চলমান লেটেস্ট ৯ম জেনারেশনের প্রসেসর কেনা যায় তবে অবশ্যই তা নির্বাচন করুন। আর যদি AMD কিনতে চান তবে RYZEN 3 2200G, 2400G অথবা RYZEN 5 3500G থেকে যেকোনোটি নিতে পারেন। আর থলি ভরা বাজেট থাকলে তো কোন কথাই নাই, নিয়ে নিন Core i9 এর 10th জেনারেশনের প্রসেসর অথবা AMD Ryzen 7 3900x এর মত কোন গেমিং জন্তুকে। তবে প্রসেসর কেনার সময় খেয়াল রাখবেন কিছু প্রসেসর এর সাথে বিল্ট ইন গ্রাফিক্স থাকে না। যেহেতু আপনার গ্রাফিক্স কার্ড এর জন্য আলাদা বাজেট আছে এবং এখনি গ্রাফিক্স কার্ড সহ পিসি বিল্ড করবেন তাই আমি সাজেস্ট করবো বিল্ট ইন গ্রাফিক্স ছাড়া প্রসেসর সিলেক্ট করতে। এতে আপনার বাজেট কিছুটা সাশ্রয় হবে এবং পারফর্মেন্স ও ভালো পাবেন।
২) মাদারবোর্ড (Motherboard)
গেমিং এর জন্য হোক বা সাধারণ কাজের জন্নই হোক, ভালো মানের মাদারবোর্ড সিলেক্ট করা গুরুত্বপূর্ণ কারন মাদারবোর্ড আপনার পিসির বাকি কম্পোনেন্টগুলোকে পেটে ধারন করে রাখবে সাথে সাথে পারফর্মেন্স বাড়াতে সহযোগিতা করবে। মাদারবোর্ডের উপরই সকল অনান্য যন্ত্রাংশের সংযোগ থাকে তাই একে মাদার - বোর্ড বলা হয়। আর প্রসেসর এর সকেটের সাথে মিলিয়ে আপনাকে মাদারবোর্ড ব্যাবহার করতে হবে। গেমিং মাদারবোর্ড সাধারণ মাদারবোর্ড থেকে ভিন্ন থাকে অর্থাৎ গেমিং মাদারবোর্ড এ ভবিষ্যৎ পিসি আপগ্রেডের জন্য বিভিন্ন স্লট ও পোর্ট বেশি থাকে। গেমিং মাদারবোর্ড এ র্যাম এর স্লট ২ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত থাকতে পারে। তেমনি ভাবে গ্রাফিক্স কার্ড স্লট ১ থেকে ২টি, ভালো মানের ল্যান/ ওয়াইফাই এবং অফারক্লক করার মত ফিচার থাকতে হবে।
গেমিং পিসি বিল্ড করার সময় প্রসেসর ও মাদারবোর্ডে যথেষ্ট পরিমাণের বাজেট সেট করা উচিত কারণ এই দুটি জিনিস ভবিষ্যৎতে আপগ্রেড করা কষ্টসাধ্য।
৩) র্যাম (RAM)
র্যাম এর উপর পিসি এর চলমান পারফর্মেন্স নির্ভর করবে। যত স্পীড ও বেশি র্যাম থাকবে পিসি তত বেশি প্রোগ্রাম ও ভারি গেইম চালাতে পারবে। বর্তমানে DDR4 র্যাম বাজারে চলছে তবে এর সাথে আপনার খেয়াল রাখতে হবে বাসস্পীড MHZ এর বেপারটা। র্যাম এর বাস স্পীড বেশি থাকা মানে হচ্ছে কাজের গতি আরও বেড়ে যাওয়া। সম্ভব হলে ৩২০০ বাস স্পীডের র্যাম নির্বাচন করাই ভালো। এছাড়াও গেমিং পিসির সৌন্দর্য বাড়াতে র্যাম এর সাথে RGB লাইট দেয়া থাকে যা মাদারবোর্ড এর সাথে Sync করে খুব সুন্দর ভাবে কন্ট্রোল করা যায় এবং গেমিং পিসির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
র্যাম এর স্লট বেশি থাকলে আপনি ভবিষ্যতে র্যাম আপগ্রেড করে নিতে পারবেন তাই সেভাবে প্লেন করে আপনাকে র্যাম কিনতে হবে। গেমিং পিসি এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৮ জিবি র্যাম কেনাই ভালো। বাজেট বেশি হলে ১৬, ৩২ অথবা ৬৪ জিবি পর্যন্ত র্যাম বাড়িয়ে নিতে পারেন।
৪) গ্রাফিক্স কার্ড (Graphics Card)
গেমিং পিসি এর বিশেষত্ব হচ্ছে এর গ্রাফিক্স কার্ড। গ্রাফিক্স কার্ড অবশ্যই এক্সট্রা লাগাতে হবে। প্রসেসর এর বিল্ট ইন গ্রাফিক্স দিয়ে আপনি ভালো কোন গেইম ক্ষেত্রে পারবেন না। গ্রাফিক্স যত ভালো মানের হবে আপনার গেইম এর ভিজুয়াল পারফর্মেন্স ও স্মুথনেস তত বাড়বে। বর্তমানে NVIDIA Geforce ও AMD Redion এর বিভিন্ন গ্রাফিক্স কার্ড বাজারে রয়েছে। RTX 2000 ও RX 5000 সিরিজের গ্রাফিক্স এখন খুবই জনপ্রিয় ও পারফর্মেন্সের দিক থেকে এগিয়ে। তবে যদি আপনার বাজেট কম থাকে তবে আগের GTX 1000 সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ড ব্যাবহার করতে পারেন। গ্রাফিক্স ভালো হলে আপনি লেটেস্ট গেইম গুলো আলট্রা সেটিং এ খেলতে পারবেন এবং FPS খুব ভালো পাবেন। নরমাল বাজেটে আপনি GTX 1050 অথবা 1060 কিনতে পারেন তবে এই গ্রাফিক্স কার্ডগুলোতে আপনি দুবছর আগের গেইম গুলো Ulta সেটিং এ খেলতে পারবেন এবং বর্তমান গেইমগুলো Medium সেটিং এ ক্ষেত্রে পারবেন এবং FPS 40 এর আশেপাশে পাবেন।
তবে আপনি যদি 4K রেজুলেশনে গেমিং করতে চান তাহলে একটি গ্রাফিক্স কার্ডে আপনার কাজ হবে না আপনার চাই দুটি গ্রাফিক্স কার্ড। এক্ষেত্রে NVIDIA দুটি একই মডেলের গ্রাফিক্স কার্ড Bridge করে নিতে হবে অন্যদিকে AMD এর যেকোনো Crossfire ফিচারযুক্ত গ্রাফিক্স কার্ডগুলো Crossfire করে নিতে হবে।
৫) স্টোরেজ (Storage)
গেমিং পিসি এর ক্ষেত্রে স্টোরেজ এর সাথে সাথে যেহেতু পারফর্মেন্স ও গুরুত্বপূর্ণ তাই আমি অবশ্যই সাজেস্ট করবো এসএসডি SSD নিতে। যদি বাজেট কম থাকে তবে মিনিমাম ১২৮ জিবি SSD নিন। যদি M.2 NVME সিরিজের নেয়া যায় অবশ্যই আরও ভালো। বাজেট বেশি থাকলে SSD এর কেপাসিটি বাড়িয়ে সাথে হার্ডডিস্কও ব্যাবহার করতে পারেন। SSD কেনার সময় ভালো ব্র্যান্ড এর SSD নির্বাচন করতে হবে।
৬) পাওয়ার সাপ্লাই (Power Supply)
গেমিং পিসিতে অবশ্যই আপনাকে ভালো ব্র্যান্ড এর পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করতে হবে। পাওয়ার সাপ্লাই গেমিং পিসি এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ কারন পাওয়ার ঠিক ভাবে সাপ্লাই না হলে অন্য কম্পোনেন্ট অনেক সময় নষ্ট পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। পাওয়ার সাপ্লাই নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রাফিক্স কার্ড এর পাওয়ার কঞ্জামসন জেনে নিতে হবে এবং তা থেকে কিছুটা বেশি ওয়াট এর পাওয়ার সাপ্লাই কিনতে হবে। তবে অবশ্যই খুব বেশি অপচয় করা যাবে না। ভবিষ্যতে যদি গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড করার প্ল্যান থাকে অথবা Overclock অথবা Crossfire করতে চান তবেই বেশি ওয়াট এর পাওয়ার সাপ্লাই কিনবেন। অনেকে সাজেস্ট করবে কেসিং এর সাথে পাওয়ার সাপ্লাই ভালো তবে আমি সাজেস্ট করছি যদি সম্ভব হয় ব্র্যান্ড এর আলাদা পাওয়ার সাপ্লাই কিনে ব্যাবহার করতে।
৭) কুলার (Cooler)
গেমিং পিসি এর সবগুলো কম্পোনেন্ট কেসিং এর ভিতর চলার সময় অনেক হিট হয়। বিশেষ করে অনেকক্ষণ একটানা গেমিং করলে অনেক বেশি হিট হয়ে যায়। মূলত প্রসেসর ও গ্রাফিক্স কার্ড বেশি গরম হয়। অনেক প্রসেসর এর সাথে স্টক কুলার দেয়া থাকে এবং গ্রাফিক্স কার্ডের সাথেও ভালো মানের কুলিং সিস্টেম থাকে। তবে আমি সাজেস্ট করবো কেসিং এ ২-৩ টা আলাদা ফ্যান ব্যাবহার করার। যদি বাজেট বেশি থাকে তবে আপনি স্টক কুলার না লাগিয়ে লিকুইড কুলার ব্যাবহার করতে পারেন অথবা ওয়াটার কুলিং সিস্টেম করতে পারেন পিসিতে।
৮) কেসিং (Casing)
কেসিং এর ব্যাপারে অনেকে মাথা ঘামায় না। মনে করে কেসিং এর প্রয়োজনীয়তা তেমন নাই। তবে আমি বলবো কেসিং টেকসই ও মজবুত দেখে কিনতে হবে আর একটি জিনিশ অবশ্যই দেখতে হবে কেসিং এর এয়ারফ্লো কেমন। কেসিং এ বাতাস যাওয়া আসা করার মত বেবস্থা থাকতে হবে যাতে কুলার ব্যাবহারে ভেতরের কম্পোনেন্ট ঠাণ্ডা থাকে। এছাড়া গেমিং লুক দিতে টেম্পারড গ্লাস ও RGB সহ কেসিং কিনতে পারেন। তবে বাজেট কম থাকলে আপাতত ভালো এয়ারফ্লো সহ কেসিং কিনলেই হবে।
৯) মনিটর (Monitor)
গেমিং এর জন্য মনিটর অপরিহার্য একটি অংশ। গেমিং মনিটর শুধু সাইজ নয় এগুলোর মধ্যে আরও কিছু টেকনোলজিকাল পার্থক্য থাকে। আপনার গ্রাফিক্স কার্ডের সর্বোচ্চ রেজুলেসন সাপোর্টেড মনিটর কিনতে হবে। এছাড়াও রিফ্রেশ রেট (Refresh Rate) বেশি এবং রেস্পন্স টাইম (Response time) কম এমন মনিটর কিনতে হবে। যদি বাজেট খুব বেশি থাকে তবে আকারে বড়, রেজুলেসন বেশি ও কার্ভড মনিটর কিনতে পারেন। অনেকে আবার একাধিক মনিটর ব্যাবহার করে থাকেন গেমিং এ। তবে অবশ্যই HDMI পোর্ট সহ মনিটর কেনা ভালো।
১০) অন্যান্য কম্পোনেন্ট (Other Components)
এবার আসি অন্য কি কি এক্সেসরিজ আপনি কিনতে পারে, প্রথমে কীবোর্ড, মাউস, হেডফোন, স্পীকার এগুলো আপনার বাজেট অনুযায়ী কিনতে পারেন। তবে লক্ষ রাখতে হবে গেমিং এ ব্যাবহার করতে হলে আপনার কীবোর্ড মাউস হেডফোন অবশ্যই গেমিং এর জন্য কমফোর্টেবল হতে হবে। অনেকে গেমিং পিসিকে একটি আকর্ষণীয় গেমিং লুক দিতে চান তাই খরচ ও করতে হয় একটু বেশি। অনেকে গেমিং পিসিতে আলাদা RGB LED স্ট্রিপ ব্যাবহার করেন।
এই ছিল আজকের মত আমাদের গেমিং পিসি বিল্ড করার ক্ষেত্রে কিছু প্রয়োজনীয় টিপস। তবে অবশ্যই বাজেটের মধ্যে আপনাকে আপনার সম্পূর্ণ কম্পোনেন্ট সিলেকশনে সতর্ক থাকতে হবে। বাজেট কম থাকলে কোন ভাবেই অহেতুক অপ্রয়োজনীয় কোন কম্পোনেন্ট কিনে অপচয় করা যাবে না বরং পারফর্মেন্স এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আশা করছি আজকের এই লিখা নতুন গেমারদের গেমিং পিসি সম্পর্কে কিছুটা ধারনা দিবে। নতুন নতুন আরও এমন লিখা পেতে projukti.com.bd এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.